NewsOfEarthForAll

অর্থনৈতিক বিশ্বপরিস্থিতিতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা: বিশ্ব অর্থনীতি কি বিপদের মুখে?

October 18, 2025 10:48 am

আজকের বৈশ্বিক অর্থনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উত্তেজনা। দুই দেশের এই প্রতিযোগিতা কেবল বাণিজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি প্রযুক্তি, জ্বালানি, বিনিয়োগ, এমনকি ভূ-রাজনীতির কেন্দ্রেও ছড়িয়ে পড়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সংঘাত যদি নিয়ন্ত্রণে না আসে, তবে পুরো বিশ্বের অর্থনীতি দীর্ঘমেয়াদে বড় ধরণের সংকটে পড়তে পারে।


💰 যুক্তরাষ্ট্র–চীন প্রতিযোগিতা কোথায় শুরু হলো?

এই উত্তেজনার মূল শুরু ২০১8 সালে, যখন যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর উচ্চ কর (tariff) আরোপ করে। তার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় চীনও আমেরিকান পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে দেয়।
প্রথমে এটি “trade war” নামে পরিচিত ছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে এটি “tech war” এবং “economic cold war”-এ রূপ নেয়।

আজকের দিনে বিষয়টি আরও জটিল —

  • যুক্তরাষ্ট্র চীনের প্রযুক্তি কোম্পানি যেমন Huawei, TikTok, ZTE ইত্যাদির ওপর নিয়ন্ত্রণ জারি করেছে।
  • অন্যদিকে চীন rare earth minerals (দুর্লভ খনিজ উপাদান) রপ্তানিতে সীমাবদ্ধতা আরোপ করে পাল্টা জবাব দিচ্ছে।

📉 বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর প্রভাব

চীন ও যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব অর্থনীতির দুই প্রধান শক্তি। একসাথে তারা বিশ্বের মোট উৎপাদনের প্রায় ৪০% নিয়ন্ত্রণ করে।
তাই এই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা মানেই —

  • আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা
  • মুদ্রার মান ওঠানামা
  • সরবরাহ শৃঙ্খলে (supply chain) বাধা
  • উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য মূল্যস্ফীতি ও আমদানি সংকট

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO) সতর্ক করে বলেছে, যদি পরিস্থিতি এভাবেই চলতে থাকে, তাহলে বিশ্বব্যাপী উৎপাদন ৭% পর্যন্ত কমে যেতে পারে


⚙️ প্রযুক্তি যুদ্ধ: নতুন অর্থনৈতিক অস্ত্র

এখনকার অর্থনীতিতে প্রযুক্তিই সবচেয়ে বড় শক্তি
যুক্তরাষ্ট্র চায় না চীন তার আধুনিক চিপস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), এবং রোবোটিক প্রযুক্তিতে শীর্ষে চলে যাক।
অন্যদিকে, চীনও নিজস্ব প্রযুক্তি তৈরি করে পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর চেষ্টা করছে।
এই প্রতিযোগিতা আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি বাজারে বড় ধরণের বিভাজন তৈরি করছে —
একদিকে পশ্চিমা ব্লক, অন্যদিকে চীনা ব্লক।


🌐 উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য কী বার্তা?

বাংলাদেশ, ভারত, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া — এই দেশগুলো সরাসরি প্রভাবিত হতে পারে।
👉 সরবরাহ শৃঙ্খলে সুযোগ যেমন তৈরি হচ্ছে (কারণ অনেক কোম্পানি চীন ছেড়ে নতুন দেশ খুঁজছে),
তেমনি বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি ও বিনিয়োগ হ্রাসও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।


🕊️ সমাধান কি সম্ভব?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বহুপাক্ষিক আলোচনা ও অর্থনৈতিক সংলাপ-ই হতে পারে একমাত্র পথ।
WTO, IMF, এবং G20–এর মতো সংস্থাগুলো যদি নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে, তাহলে উত্তেজনা কিছুটা কমতে পারে।
অন্যথায়, এই সংঘাত শুধু দুই দেশের জন্য নয়, বরং পুরো মানবজাতির অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।


চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অর্থনৈতিক সংঘাত এখন আর কেবল বাণিজ্য যুদ্ধ নয় — এটি হয়ে উঠেছে বিশ্ব অর্থনীতির দিকনির্ধারক যুদ্ধ
আজকের বিশ্বায়নের যুগে কোনো দেশ একা থাকতে পারে না।
তাই সহযোগিতা, ভারসাম্য ও ন্যায্য নীতিই পারে ভবিষ্যতের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে।

Leave a Reply